★ বিপ্লব পরবর্তী সময়:
– যেকোনো ভৌগলিক অঞ্চলেই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে নানামুখী অস্থিরতা দেখা যায়। সাময়িক প্রশাসন শূন্যতা অনেকক্ষেত্রে অরাজকতা সৃষ্টি করে। দেশ ও জাতির কল্যাণে বিপ্লবের অর্জনকে দীর্ঘস্থায়ী করার লক্ষ্যে অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সচেতন নাগরিক সমাজ তথা সর্বস্তরের জনগণের তরুণদের প্রতি দায়িত্ব রয়েছে।
★ অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে:
• মনস্তত্ত্ব বিকাশে সহায়তা :
ছাত্রদেরকে জাতির যেকোনো প্রয়োজনে বারবার ব্যবহার না করা, তারা রাষ্ট্রের রিজার্ভ বাহিনী নয় (তবে ভবিষ্যতে জরুরি প্রয়োজনে, জাতির প্রত্যেককেই এগিয়ে আসতে হবে)। আন্দোলন পরবর্তী তাদের মানসিক বিকাশে সহায়তা করতে হবে; সর্বদা অস্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রেখে তারুণ্যের শক্তিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা যাবে না।
• যথাযথ জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্র তৈরি:
উপযুক্ত পড়াশোনা ও জ্ঞান অর্জনের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে হবে। ভবিষ্যতে দেশ ও জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে এখন থেকেই তাদের মেধা ও দক্ষতার পরিচর্যা করতে হবে।
• অতিরিক্ত গুরুত্ব প্রদান থেকে বিরত থাকা:
স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে ছাত্রসমাজ দেশকে যে সাফল্য এনে দিয়েছে সেজন্য তারা অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার; কিন্তু অতিরিক্ত গুরুত্ব প্রদান করে তাদের স্বাভাবিক বর্ধনের পথ পরিক্রমায় বাধার সৃষ্টি না করা।
• আন্দোলন প্রত্যক্ষকারীদের মেন্টাল ট্রমা দূর করতে সহায়তা করা :
অনেক ছাত্র সরাসরি আন্দোলন প্রত্যক্ষ করেছে। আহত-নিহত হয়েছে, অঙ্গহানি বা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে; সরাসরি সহিংসতা দেখেছে; যে বিষয়ে আগে কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। এজন্য পরবর্তী সময়ে তারা যাতে Post traumatic disorder / দীর্ঘকালীন ডিপ্রেশনে না যায় সে লক্ষ্যে তাদের যথাযথ দিকনির্দেশনা দেওয়া বিশেষত কুরআন-হাদিসের আলোকে।
• স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়া :
স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি ক্যাম্পাসে দ্বীনি পরিবেশ সৃষ্টিতে বাধা না দেওয়া; বরং দ্বীন পালনের জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি করে দেওয়া। দ্বীন পালনের বিষয়ে ভবিষ্যতে কাউকে যেন নিগ্রহের শিকার না হতে হয়; এ বিষয়ে সচেতন থাকা।
★ তরুণদের উদ্দেশ্যে :
(বিশেষত যারা নিজেদের দ্বীন-দুনিয়া, ক্যারিয়ার গঠনের পাশাপাশি অপরকেও দ্বীনের দাওয়াত দিতে চায়)
• মানসিক প্রশান্তি:
মনোজগতের পরিচর্যা করা। আন্দোলনের ফলে যেন পোস্ট ট্রমাটিক জটিলতা সৃষ্টি না হয়; এজন্য আল্লাহর জিকির ও কুরআনের সাথে সম্পর্ক বাড়িয়ে দেওয়া।
• অতিরিক্ত উচ্চাশা থেকে বের হয়ে আসা:
পূর্বের মতো ক্যারিয়ার গঠনে মনোযোগী হওয়া। গত ৫’ই আগস্ট দেশ নতুনভাবে স্বাধীন হলেও বাংলাদেশের এখনো নিজস্ব অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আগামীর বাংলাদেশে তরুণদের জন্য অনেক নতুন ক্ষেত্র তৈরি হলেও, সবকিছু নিজেদের মত হবে না। স্বাভাবিক ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আত্মউন্নয়ন ও ক্যারিয়ার গঠনে মনোযোগী হওয়া।
★ উলামায়ে কেরাম বিধি-বিধান পাঁচ (কোন কোন মতে ছয়) ভাগে ভাগ করেছেন:
১) ইমানিয়াত/আকাইদাত (ইসলামের বিশ্বাস্য বিষয় সমূহ)।
২) ইবাদত (নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ও অন্যান্য ফরজ ও নফল ইবাদত সমূহ; যা কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যেই বান্দাহ করে থাকে)।
৩) মুয়ামালাত (আর্থিক বিষয়সমূহ; ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি ও লেনদেন বিষয়ক)।
৪) মুআশারাত (সামাজিক আচার-আচরণ; আর্থিক নয় এমন বিষয়সমূহ)
– এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে হবে। গিবত, অপরের সম্মানহানি, কাউকে ছোট করা, কষ্ট দেয়া, কারোর ওপর জুলুম করা যাবে না। অপরের অধিকার নষ্ট করে ব্যক্তিগত পর্যায়েও কেউ জালিম হতে পারে। এজন্য নিজের আচরণে সতর্ক থাকা ও সর্বাবস্থায় অপরকে ক্ষমা করে দেয়ার মানসিকতা রাখা।
৫) আখলাকিয়াত (উন্নত সদাচার, বিনয়)।
• আকিদাহ সহিহ করা ও বিভ্রান্তি দূর করা:
দ্বীনের ক্ষেত্রে বিশ্বাসগত ও ইবাদতের বিষয়গুলোতে (১ ও ২ নং পয়েন্ট) স্পষ্ট ধারণা রাখা; সন্দেহ দূর করা। দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞানের পরিধি বাড়ানো। এক্ষেত্রে দ্বীনদার আলিমের সংস্পর্শে থাকার চেষ্টা করা।
• দোয়া করতে শেখা :
জীবনের যেকোন প্রয়োজনে আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া করা। দোয়া বান্দার সাথে আল্লাহর সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করে। বিনয়ের সাথে আল্লাহর স্মরণে একান্তে চোখের পানি ফেলা।
• সুন্নাহর অনুসরণ:
ব্যক্তিগত জীবন ও ইবাদতের সাথে জড়িত সুন্নাহ গুলো নিজে পালন করা ও অপরকে শেখানো। রাসূল ﷺ এর সিরাত অধ্যয়ন ও ব্যক্তিজীবনে বাস্তবায়ন করতে শেখা।
• দ্বীনি জ্ঞান বৃদ্ধি :
অর্থসহ নিয়মিত কোরআন, হাদিস ও তাফসির অধ্যয়নের চেষ্টা করা। প্রয়োজনে আরবি ভাষা শেখা। অবসর সময় অবহেলায় না কাটিয়ে দ্বীনি ইলম চর্চার বিষয়ে সচেষ্ট থাকা।
• উন্নত চারিত্র গঠন :
সালাম, আখলাক, উন্নত সদাচার ব্যক্তিজীবনে ধারণ করা। আল্লাহর পথে আহ্বানকারীদের চরিত্র হতে হবে সবচেয়ে উত্তম, পবিত্র ও অপরের জন্য অনুসরণীয়।
• সামাজিক সমস্যা সমাধান :
অপর তরুণ ভাইয়েরা যাতে নেশাগ্রস্ত, মাদকতা, আত্মহত্যা, হতাশার দিকে না যায় এজন্য তাদের পাশে থেকে সাহায্য করতে হবে। আবেগের তীব্র প্রকাশ ঘটিয়ে তারা যাতে উগ্রপন্থায় না যায়; এজন্য সচেতন দৃষ্টি রাখতে হবে।
• ভবিষ্যত জীবনে ইতিবাচক মনোভাব :
জুলাইয়ের আন্দোলনকালীন সময়টা যেন পরবর্তী জীবনে নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে সেদিকে সতর্ক থাকা। আন্দোলনের সাফল্যকে অব্যাহত রাখার জন্য অনবরত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে ও ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
• স্বভাবজাত ক্রোধ দমন :
ক্ষমা করার মানসিকতা রাখতে হবে। কোন বিরোধী শক্তির প্রতি স্বভাবজাত ক্রোধ যেন জন্ম না নেয়; এ বিষয়ে সচেতন থাকা। আন্দোলন পরবর্তী যেকোনো ধরনের উগ্রপন্থা থেকে বিরত থাকতে হবে।
সর্বোপরি গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে নিজের ইমান, আমল, আখলাক, ক্যারিয়ার উন্নত করা ও নতুন বাংলাদেশ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা।