কেন আমরা বাংলাদেশে ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ তথা এলজিবিটি মতবাদ প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করি

পশ্চিমা বিশ্ব থেকে আমদানী করা জঘন্য ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ (Transgenderism) বাস্তবায়নের অপতৎপরতা চলছে বাংলাদেশে। ‘ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ’ বা রূপান্তরকামীতাকে অনেকে ‘জেন্ডার আইডেন্টিটি’ বা লিঙ্গ পরিচয় মতবাদও বলে থাকেন।

এটি মূলত পশ্চিমা বিশ্বের ঘৃণ্য এলজিবিটি (LGBT Rights Movemement) আন্দোলনের অংশ। এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য সমকামসহ বিভিন্ন যৌন বিকৃতির স্বাভাবিকীকরণ। এলজিবিটি একটি গুচ্ছ শব্দ যেখানে লেসবিয়ান (নারী সমকামী), গে (পুরুষ সমকামী), বাইসেক্সুয়াল (উভকামী) ও ট্রান্সজেন্ডার অন্তর্ভুক্ত। এ আন্দোলনের মাধ্যমেই আজ পশ্চিমা বিশ্বে সমকাম, পুরুষে পুরুষে ‘বিয়ে’সহ নানাবিধ বিকৃতির বৈধতা দেয়া হয়েছে।

যেহেতু বাংলাদেশে সরাসরি সমকামীতার পক্ষে কর্মকাণ্ড চালানো কঠিন, তাই এখানে এলজিবিটি এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে ট্রান্সজেন্ডার নামের আড়ালে। জন্মগত হিজড়াদের প্রতি সমাজের মানুষের সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ট্রান্সজেন্ডার তথা এলজিবিটি বিকৃতিকে বৈধতা দেয়ার জন্য চলছে অপতৎপরতা।  

ট্রান্সজেন্ডারবাদ নামক এ বিকৃত মতবাদের প্রধান দাবিগুলো হচ্ছেঃ

ক।   জন্মগত দেহ যা-ই হোক না কেন, নিজেকে যে নারী দাবি করবে তাকে নারী বলে মেনে নিতে হবে। নিজেকে যে পুরুষ দাবি করবে তাকে আইনী ও সামাজিকভাবে মেনে নিতে হবে পুরুষ হিসেবে।

খ।   মানুষ ইচ্ছেমতো নারী বা পুরুষের পোশাক পরবে, ইচ্ছেমতো ওষুধ আর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বদলে নেবে নিজের দেহকে। আর কেউ যদি অস্ত্রোপচার না করেই নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের বলে দাবি করে, তাও সবাইকে মেনে নিতে হবে।

গ।   এ সকল উদ্ভট দাবীর ব্যাপারে, রাষ্ট্র ও সমাজ কোনো বাঁধা দিতে পারবে না, বরং ‘সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী’ হিসেবে এ ধরনের মানুষকে দিতে হবে বিশেষ সুবিধা। সেই সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একদম ছোটবেলা থেকে সবাইকে শেখাতে হবে যে, মানুষের মনটাই গুরুত্বপূর্ণ; দেহ না।  

ট্রান্সজেন্ডারবাদ অনুযায়ী, মানুষের পরিচয় নির্ভর করে তার অনুভূতির আর মনের চাওয়ার উপর। নিজেকে সে যা মনে করে সেটাই তার পরিচয়। কারো দেহ পুরুষের হলেও সে নিজেকে নারী মনে করতে পারে। সমাজ ও আইন তাকে নারী হিসেবেই গণ্য করবে, যদিও ঐ পুরুষ শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ হয়। একইভাবে দেহ নারীর হলেও নিজেকে কেউ পুরুষ মনে করতে পারে। সেক্ষেত্রে সামাজিক ও আইনীভাবে তাকে পুরুষ গণ্য করা হবে। যদিও তার মাসিক হয়, সে গর্ভবতী হয়, শারীরিকভাবে সে থাকে শতভাগ সুস্থ। আর একই যুক্তিতে মানুষ কার সাথে যৌন সম্পর্ক করবে, তাও নির্ভর করবে মনের উপর।

সুস্থ, স্বাভাবিক, বিবেকবান মানুষের পক্ষে এমন উন্মাদনা মেনে নেয়া সম্ভব না। অথচ এবিষয়টি আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য চরম অপতৎপরতা চলছে। এই মতবাদের কুরুচিপূর্ণ শিক্ষা তুলে আনা হচ্ছে মিডিয়া থেকে শুরু করে পাঠ্যবইয়ে। সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হল এ বিষয়টিকে আইনী বৈধতা দেয়ারও পায়তারা চলছে। ট্রান্সজেন্ডার সুরক্ষা আইন ২০২৩ নামে একটি আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে, যা পাশ হলে কার্যত এলজিবিটি-কে বৈধতা ও আইনীভাবে স্বীকৃতি দেয়া হবে।

আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই ট্রান্সজেন্ডারবাদকে বৈধতা দেয়ার অর্থ,

  • ঘৃণ্য এলজিবিটি এজেন্ডার আইনী স্বীকৃতি
  • নারী ও পুরুষের সীমারেখা মুছে ফেলা
  • সমকামীতার স্বাভাবিকীকরণ
  • পুরুষের সাথে পুরুষের এবং নারীর সাথে নারীর ‘বিয়ে’-কে বৈধতা দেয়া
  • উত্তরাধিকার সম্পত্তি বন্টনসহ পারিবারিক আইনের ক্ষেত্রে মারাত্বক সামাজিক বিশৃঙ্খলা
  • নারীর জন্য নির্ধারিত স্থানে পুরুষের অনুপ্রবেশ
  • কিশোরী ও নারীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বৃদ্ধি 
  • ইচ্ছামতো ‘লিঙ্গ পরিবর্তন’ সার্জারির বৈধতা দেয়া

বাংলাদেশের মুসলিম সমাজ কোন পরিস্থিতিতেই এধরনের বিকৃতি এবং মারাত্বক সমাজ বিধ্বংসী পদক্ষেপ মেনে নেবে না। আমরা মনে করি, অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও সমাজে এ ধরণের বিকৃতি ও অনাচারের প্রচার ও প্রসারের বিরুদ্ধেই অবস্থান নেবেন।

জন্মগত হিজড়া আর ট্র্যান্সজেন্ডার একই বিষয় নয়

যেহেতু ট্রান্সজেন্ডারবাদ প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চলছে হিজড়াদের অধিকারের আলাপ তুলে তাই একথা প্রথমেই স্পষ্ট করা দরকার যে জন্মগত হিজড়া বা তথাকথিত ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ আর ট্রান্সজেন্ডার এক না। হিজড়া হল এমন মানুষ যাদের জন্মগতভাবে প্রজননব্যবস্থা এবং যৌন বিকাশের ত্রুটি থাকে। এ ত্রুটি যৌন অঙ্গের গঠনগত, জিনগত বা অন্য ধরণের হয়ে থাকতে পারে। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এধরণের মানুষকে আন্তঃলিঙ্গ বা Intersex হয়। বর্তমানে এধরনের সমস্যাকে DSD বা Disorder Of Sex Disorder (যৌন বিকাশের ত্রুটি) বলেও অভিহিত করা হয়। এ বিষয়টিই আমাদের সমাজে জন্মগত হিজড়া বলে পরিচিত, এধরনের মানুষকে আমাদের সমাজে অনেক সময় ‘তৃতীয় লিঙ্গ’-ও বলা হয়ে থাকে।

ইসলামি শরীয়াতে অনুযায়ী হিজড়া বা ইন্টারসেক্স মানুষদের অধিকার আছে স্বাভাবিক জীবনযাপন করার, পরিবার গড়ার, সমাজে অবদান রাখার। এধরনের সন্তানেরা তাদের মা- বাবার সম্পত্তির ভাগ পাবে। উত্তরাধিকার সম্পদে তারা নারী হিসেবে পাবে নাকি পুরুষ হিসেবে পাবে তা নির্নয়ের পদ্ধতিও ইসলামী শরীয়াহতে নির্ধারিত। প্রতিবন্ধী মানুষের যেমন শারীরিক ত্রুটি থাকে এটি তেমনই একটি ত্রুটি। এ ত্রুটির কারণে তাদের সমাজের মূল স্রোতের বাইরে ঠেলে দেয়া ইসলাম সমর্থন করে না।

কাজেই জন্মগত হিজড়াদের অধিকার ইসলাম সমর্থন করে, তাদের অধিকার নিশ্চিত করা সমাজের দায়িত্ব। জন্মগত হিজড়াদের প্রাপ্য অধিকারের ব্যাপারে বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের সমর্থন রয়েছে, আপত্তি নেই। 

কিন্তু জন্মগত হিজড়া আর ট্রান্সজেন্ডার এক না। ট্র্যান্সজেন্ডার মানে হল শারীরিকভাবে সুস্থ এবং পরিপূর্ণ একজন নারী বা পুরুষ, যে মনে করে সে “ভুল দেহে আটকা পড়েছে”। অর্থাৎ সে “পুরুষের দেহে আটকা পড়া নারী” বা “নারীর দেহে আটকা পড়া পুরুষ”। ফলে এই ধরণের মানুষেরা বিপরীত লিঙ্গের অঙ্গভঙ্গি, পোশাক-আচরণ “অনুকরণ” এর চেষ্টা করে।

অর্থাৎ ট্রান্সজেন্ডারের সাথে দৈহিক বা জন্মগত সমস্যার কোন সম্পর্ক নেই। ট্রান্সজেন্ডারবাদ বলে দেহ সম্পূর্ন সুস্থ হলেও কেউ চাইলে অপারেশন করে লিঙ্গ পরিবর্তন করতে পারবে, অথবা অপারেশন ছাড়াই নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের বলে পরিচয় দেবে। আর সমাজ ও রাষ্ট্রকে তাই মেনে নিতে হবে। এ অবস্থানকে কোনভাবে ইসলামের জায়গা থেকে মেনে নেয়া সম্ভব না। ইচ্ছাকৃতভাবে লিঙ্গ পরিবর্তন, বিপরীত লিঙ্গের পোষাক পরা, সমলিঙ্গের সাথে যৌনতা স্পষ্টভাবে হারাম এবং বিকৃত আচরণ। এধরণের সীমালঙ্ঘন বিপর্যয় ডেকে আনে পুরো সমাজের জন্য।

তাই হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের অবহেলিত মানুষের অধিকার আদায়ের সাথে এই জঘন্য ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ তথা এলজিবিটি এজেন্ডার কোন সম্পর্ক নেই। হিজড়াদের অধিকারের আড়ালে এলজিবিটি এজেন্ডা বাস্তবায়নের ঘৃণ্য অপচেষ্টা মেনে নেয়া হবে না।

বাংলাদেশে ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ প্রসারে অপতৎপরতা

দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশে এখন মিডিয়া, শিক্ষা এবং আইনীভাবে ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ তথা এলজিবিটি এজেন্ডা বাস্তবায়নের ব্যাপক অপতৎপরতা চলছে।  

ক। পাঠ্যপুস্তকে এ জঘন্য মতবাদ জুড়ে দেয়া।

পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ ও বিকৃত যৌনতার স্বাভাবিকীকরণের চেষ্টা চলছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড NCTB সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে ৫১-৫৬ পৃষ্ঠায় ‘শরীফার গল্প’ শিরোনামের লেখায় সরাসরি ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের দীক্ষা দেওয়া হয়েছে। ৫১ পৃষ্ঠায় মূল চরিত্র শরীফা বলছে,

“আমার শরীরটা ছেলেদের মতো হলেও আমি মনে মনে একজন মেয়ে…”

এ গল্পে শরীফা নিজেই স্বীকার করছে, সে ছোটবেলায় ছেলে ছিল। নার নাম ছিল শরীফ আহমেদ। কিন্তু যখন সে আস্তে আস্তে বড় হলো তখন সেই শরীফ আহমেদই নিজেকে মেয়ে ভাবতে শুরু করলো এবং মেয়েদের মতো আচরণ করতে লাগলো। আর এটাই তার ভালো লাগে। ৫৫ এবং ৫৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,

‘আমরা যে মানুষের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখেই কাউকে ছেলে বা মেয়ে বলছি, সেটা হয়তো সবার ক্ষেত্রে সত্যি নয়।’

 ‘…একটি শিশু যখন জন্ম নেয় তখন তার শরীর দেখে আমরা ঠিক করি সে নারী নাকি পুরুষ। এটি হলো তার জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়। জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে একজন মানুষের কাছে সমাজ যে আচরণ প্রত্যাশা করে তাকে আমরা ‘জেন্ডার’ বা ‘সামাজিক লিঙ্গ’ বলি। জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়ের সঙ্গে তার জেন্ডার ভূমিকা না মিললে প্রথাগত ধারণায় বিশ্বাসী মানুষেরা তাকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়।’ 

অর্থাৎ, একজন মানুষ পুরুষের শরীর নিয়ে জন্মগ্রহণ করলেও সে যদি কোনো এক বয়সে নিজেকে নারী দাবী করে তাহলে সে নারী। আবার নারী দেহ নিয়ে জন্মগ্রহণ করা কেউ যদি নিজেকে পুরুষ দাবী করে তাহলে সে পুরুষ। যতোক্ষণ না অন্যের কোনো ক্ষতি হচ্ছে ততোক্ষণ যা খুশি তা-ই করা যায়। যারা এটা মেনে নেবে না তারা সেকেলে, পশ্চাৎপদ।   

শিশুকিশোররা সহজে প্রভাবিত হয়, নতুন জিনিসের প্রতি তাদের থাকে সহজাত আগ্রহ। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কোমলমতি কিশোরদের সামনে বিকৃতি ও অসুস্থতাকে স্বাভাবিক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে এই ইসলামবিরোধী অপশক্তি। বয়ঃসন্ধিকালে এমনিতেই নানা মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা সৃষ্টি হয়। তার উপর লিঙ্গ নিয়ে এমন বিভ্রান্ত ধারণায় মগজধোলাই কিশোর কিশোরীদের জীবন বিষিয়ে দেবে। জন্ম নেবে নানা ধরনের অসুখ ও অসঙ্গতি। সচেতন সমাজ ও অভিভাবকরা কখনোই তাদের সন্তানদের এমন  বিকৃত শিক্ষা প্রদান মেনে নিতে পারে না।

খ। কতিপয় মিডিয়া ও এনজিওর অপতৎপরতা 

ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে বিভিন্ন এনজিও ও অ্যাক্টিভিস্টরা। দৈনিক সমকালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, দেশব্যাপী ট্রান্সজেন্ডারবাদ নিয়ে কাজ করছে ‘৩০টি কমিউনিটি বেসড অর্গানাইজেশন’। ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন দেশীয় এনজিওগুলোর সাথে পশ্চিমা এলজিবিটি আন্দোলনের সম্পর্কের কথা তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খোলাখুলি উল্লেখ করা আছে। এর মধ্যে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার, ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ, নো পাসপোর্ট ভয়েস, ব্র্যাকের অধীনে পরিচালিত সমতন্ত্রের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর অপতৎপরতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।   

এনজিও এর পাশাপাশি বাংলাদেশে ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের প্রসারে পুরোদমে কাজ করছে পশ্চিমা-পদলেহী মিডিয়াগুলো। তারা ক্রমাগত ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ তথা এলজিবিটি এজেন্ডা নিয়ে ইতিবাচক প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে। নিউজ মিডিয়ার পাশাপাশি বিনোদন জগতের মাধ্যমেও ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের পক্ষে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সুন্দরী প্রতিযোগিতাতেও নারী সাজা পুরুষদের স্থান দেওয়া হচ্ছে।

গ। আইন প্রণয়ণের মাধ্যমে ট্রান্সজেন্ডারবাদ তথা এলজিবিটি এজেন্ডার প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা

সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হল বাংলাদেশে রীতিমতো আইন প্রনয়ন করে ট্রান্সজেন্ডারবাদ তথা এলজিবিটি এজেন্ডা প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়া চলমান। বিগত ১০ মার্চ ২০২২ তারিখে নিউজবাংলা২৪-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ প্রতিষ্ঠায় আইন তৈরীর অপচেষ্টা চলছে। ‘ট্রান্সজেন্ডারদের সুরক্ষায় হচ্ছে আইন’ শিরোনামের ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্র্যান্সজেন্ডারদের সুরক্ষা ও অধিকার এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে আইন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সাম্প্রতিক দেশকাল পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ট্র্যান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষায় আইন দ্রুত পাশ হবে’ শিরোনামের এক খবরে বলা হয়েছেঃ

“সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আমরা ট্র্যান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষায় আইনের খসড়া প্রণয়ন করতে পেরে খুশি। এই কমিউনিটির সদস্যদের সমাজের মূলস্রোতধারায় আনাই আমাদের মূল লক্ষ্য। সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে…

আজ বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সমাজসেবা অধিদপ্তরের আয়োজনে ‘ট্র্যান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা আইন’ এর খসড়ার কমিউনিটি কনসালটেশন কর্মশালায় এ কথা বলেন তিনি। এ কর্মশালা হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল, শাহবাগে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক এডিবির প্রিন্সিপাল সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফানসেসকো টোরনেইরি এবং এডিবির জেন্ডার অ্যান্ড সোশ্যাল ইনক্লুশন স্পেশালিস্ট নাশিবা সেলিম।”

অর্থাৎ আইনের মাধ্যমে এধরণের বিকৃতিতে মূলস্রোতে মিশিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। আর তা করা হচ্ছে অধিকারের নামে।

প্রশ্ন হল, শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ যেসব পুরুষরা আজ নারী সাজছে, তারা এর আগে কোন কোন অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল? কে তাদের বাঁধা দিয়েছিল আর দশজন পুরুষের মত স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে? কোন বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছিল তাদের? পুরুষ হিসাবে সব অধিকার তো তাদের ছিল। জন্মগত হিজড়াদের যেসব প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় তার সাথে স্বেচ্ছায় বিপরীত লিঙ্গের অনুকরণ করা এসব লোকের অবস্থা কিভাবে তুলনীয় হতে পারে?

বাস্তবতা হল এসব মানুষ শারীরিকভাবে সুস্থ হওয়া সত্ত্বেও স্বেচ্ছায় বিপরীত লিঙ্গের মানুষ হিসেবে জীবনযাপন করতে চায়। বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরতে চায়, লিপ্ত হতে চায় সমকামীতায়। আর এই বিকৃত চাওয়াকে তারা উপস্থাপন করে অধিকারের প্রশ্ন হিসাবে। আদতে তারা অধিকার চায় না, তাদের সব অধিকার আগে থেকেই ছিল। তারা চায় বিকৃতির বৈধতা।   

৫ই ডিসেম্বর ২০২৩-এ দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত “সম্পত্তিতে অধিকার পাবেন ট্রান্সজেন্ডার সন্তানরা” শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে –

“ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০২৩ ’শীর্ষক আইন ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই পাস করা হবে বলে জানান সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খায়রুল আলম শেখ। তিনি বলেন, নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশনে পাস করার জন্য আমরা কাজ করছি। এক বছরের মধ্যে আইনটি করার জন্য সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সরকার চায় এই বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায় হোক। তাই এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতায় ইতিমধ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নেতৃত্বে এর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের দ্বারা গঠিত একটি কমিটি আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে।”

অর্থাৎ যথাসম্ভব দ্রুততার সাথে এ আইনের খসড়া হয়েছে এবং তা পাস করানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ প্রক্রিয়ার পেছনে মূল চালিকা শক্তি হিসাবে আছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক, এবং বিভিন্ন এনজিও।

ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ প্রতিষ্ঠার এই আইন বাস্তবায়ন হলে তার প্রভাব পড়বে জনপরিসর থেকে শুরু করে পারিবারিক অঙ্গনে। কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে শিক্ষাক্ষেত্রে। পাবলিক টয়লেট থেকে শুরু করে পার্লামেন্টে। পুরো সমাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতো গুরুতর এবং সুদূরপ্রসারী বিষয়ে আইন প্রণয়ন হচ্ছে কাদের সাথে পরামর্শ করে? কাদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে? এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক, কিছু এনজিও আর বিদেশী দাতাদের স্বার্থ? তাদের হুকুম অনুযায়ী কি এদেশের সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালিত হবে?

আজ রাশিয়া, চীন, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্র সরাসরি এলজিবিটি এজেন্ডার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী রিশি সুনাক, ইউরোপের কয়েকটি দেশে এর বিরুদ্ধে শক্ত আন্দোলন হয়েছে, অ্যামেরিকা ও ব্রিটেনের মতো দেশে হাজার হাজার অভিভাবক ও সচেতন নাগরিক ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে, রাস্তায় নেমেছে। তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এটি সম্পূর্ণভাবে ইসলাম পরিপন্থী, সারা পৃথিবীর মুসলিমরা এলজিবিটি এবং ট্র্যান্সজেন্ডার এজেন্ডার বিরুদ্ধে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশের মতো ৯০% মুসলিম দেশে কিভাবে কোন ধরণের আলোচনা, বিচারবিশ্লেষণ ছাড়া দ্রুততম সময়ে এমন আইনের খসড়া হয়ে সেটি পাশের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়?   

যত দেশ বা সংস্থা থেকে চাপ আসুক না কেন এলজিবিটি প্রশ্নে আপস করার কোন সুযোগ নেই। এমন আইন পাশ করা হলে  তা হবে সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে এবং বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার শামিল। এধরণের ঈমানবিরোধী, সমাজবিধ্বংসী, নব্য উপনিবেশবাদী আগ্রাসন বাংলাদেশের মুসলিমরা মেনে নেবে না। কোন সুস্থ, সচেতন মানুষের পক্ষে এমন বিকৃতি ও উন্মাদনা মেনে নেয়া সম্ভব না।

ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের ধর্মীয়, সামাজিক ও আইনী জটিলতা

ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক। এ বিষয়টির আইনী বৈধতা দেয়া হলে তা সমাজ ও রাষ্ট্রে নানা ধরণের সমস্যার জন্ম দেবে।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে আপত্তিঃ 

ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ সুস্পষ্টভাবে মহান আল্লাহর নির্ধারিত সীমার লঙ্ঘন। এটি আল্লাহর সৃষ্টিতে ইচ্ছাকৃত পরিবর্তন আনা। ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ হল সমলিঙ্গের মধ্যে যৌনতাসহ নানা বিকৃত যৌনতার স্বাভাবিকীকরণ এবং মহান আল্লাহর নির্ধারিত পরিবার ও সামাজিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিদ্রোহ। মুসলিম হিসেবে এ ধরনের চরম সীমালঙ্ঘন আমাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব না।

ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেছেন:

“রাসূলুল্লাহ ﷺ পুরুষদের মধ্যে নারীর বেশ ধারণকারীদের এবং নারীদের মধ্যে পুরুষের বেশ ধারণকারিণীদের অভিশাপ দিয়েছেন।” [সহীহ বুখারী; মিশকাত, হাদীস নং ৪৪২৯]

আরেক হাদীসে এসেছে,

আল্লাহ সেসব মানুষদের উপর অভিসম্পাত করেছেন যারা তাঁর সৃষ্টিতে বিকৃতি আনে। (বুখারী, হাদীস নং ৪৮৮৬)

কাজেই সম্পূর্ণ সুস্থ শরীর নিয়ে কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বিপরীত লিঙ্গের বলে দাবি করে, বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরে, অনুকরণ করে এবং ‘লিঙ্গ পরিবর্তন’ সার্জারি করে- তাহলে এর সবগুলোই হারাম। এছাড়া ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ কে আইনীভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হলে সমকামীতাসহ, সম্পত্তির উত্তরাধিকার, নারীর জন্য নির্ধারিত স্থানে পুরুষের অনুপ্রবেশের মতো এমন অনেক বিষয় ঘটবে যা সরাসরি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক।

ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের পক্ষে আইনের অর্থ সমকামীতার স্বাভাবিকীকরণঃ

ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের অবধারিত ফলাফল হলো সম লিঙ্গের সাথে যৌনতার স্বাভাবিকীকরণ এবং বৈধতা দেওয়া। নারীর বেশে থাকা কোন পুরুষ বিয়ে কিংবা যৌনচাহিদা মেটাতে গিয়ে কী করবে? নারী বা পুরুষ যার সাথেই সে যৌনতায় লিপ্ত হবে সেটা আপাত অথবা প্রকৃত অর্থে সম লিঙ্গের সাথে যৌনতা হবে।

ধরুন, জামাল নামের পুরুষ নিজেকে নারী বলে দাবি করা শুরু করলো। আইন তাকে নারী বলে মেনে নিলো। এখন বিয়ে কিংবা যৌনচাহিদা মেটাতে গিয়ে সে কী করবে? সে যদি কোনো পুরুষকে বেছে নেয়, তাহলে সেটা হবে সমলিঙ্গের সাথে যৌনতা। জামাল নিজেক পুরুষ সে যাকে বেছে নিয়েছে সেও পুরুষ।

অন্যদিকে জামাল যদি কোনো নারীকে বেছে নেয়, তাহলে কার্যত সেটা সমলিঙ্গের মধ্যে যৌনতা হবে না। কিন্তু আপাতভাবে, যারা বিস্তারিত জানবে না তাদের কাছে একে মনে হবে সমকামিতা। কারণ জামাল নিজেকে নারী হিসেবে উপস্থাপন করে একজন নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক করছে। অর্থাৎ যা-ই বেছে নেওয়া হোক না কেন, দিন শেষে সমকামিতার স্বাভাবিকীকরণ ঘটবে। পুরুষের সাথে পুরুষের এবং নারীর সাথে নারীর ‘বিয়ে’-কে বৈধতা দেয়া হবে।

বাংলাদেশে নিজেদের যারা ট্র্যান্সজেন্ডার বলে দাবি করছে, সমকামীতার প্রতি তাদের আসক্তির বিষয়টিও স্পষ্ট। উদাহরণস্বরূপ, ১৯শে সেপ্টেম্বর ২০২৩, দৈনিক প্রথম আলো-তে প্রকাশিত “নারী থেকে পুরুষ হয়েছেন তিনি, এখন জটিলতা বাংলাদেশ রেলওয়ের চাকরিতে” শিরোনামের প্রতিবেদনে শারমিন আক্তার ঝিনুক নামে এক নারীর কথা বলা হয়েছে। এই নারী শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন। কিন্তু অন্য ‘নারী প্রতি আকৃষ্ট’ হবার কারণে ‘নারী থেকে পুরুষে রূপান্তরিত’ হয়েছেন তিনি। নতুন নাম নিয়েছেন জিবরান সওদাগর। দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,

“জিবরান বলেন, ‘আমি ছিলাম নারী। মাসিক হওয়াসহ সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু যত বড় হচ্ছিলাম, বুঝতে পারছিলাম আমি অন্য ছেলে বা পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার চেয়ে নারীর প্রতি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছি। স্কুলড্রেসের ওড়না পরতে বা মেয়েদের মতো পোশাক পরতে ভালো লাগতো না। একটা সময় একজন মেয়ের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক হয়। চার বছর সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সেই মেয়ে চলে যাওয়ার পর মনে হয়, আমি পুরুষ হলে তো ও এভাবে চলে যেতো না।…” 

এ বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে শারমিন আক্তার নামের এ নারী শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন। আরেকজন নারীর প্রতি তার বিকৃত কামনা ছিল। এই কামনাকে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য তিনি নিজেকে ‘পুরুষে রূপান্তরিত’ করেছেন, অর্থাৎ নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার দাবি করছেন। এখন আবদার করছেন আইন ও সমাজ তাকে যেন মেনে নেয় পুরুষ হিসেবে।

এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে যদি এ বিষয়টির বৈধতা দেয়া হয় তাহলে একে সমকামীতার স্বাভাবিকীকরণ ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে?

সমকামীতা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর রকমের অপরাধ, যে অপরাধের কারনে নবী লূত আলাইহিস এর সম্প্রদায়কে মহান আল্লাহ যন্ত্রনাদায়ক আযাবের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। এ বিকৃতির স্বাভাবিকীকরণ মহান আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের শামিল। আমরা আল্লাহর কাছে তাঁর আযাব থেকে আশ্রয় চাই।

উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে বিশৃঙ্খলাঃ

ট্রান্সজেন্ডারবাদের পক্ষে আইন করার অর্থ হবে, মেয়ে সন্তান যদি নিজেকে পুরুষ দাবি করে তাহলে এই আইন অনুযায়ী বাবার সম্পত্তি থেকে সে পুত্র সন্তানের সমান ভাগ পাবে। পুরুষ সন্তান যদি নিজেকে নারী দাবি করে তাহলে সে সম্পত্তি থেকে নারীর সমান অধিকার পাবে। বাংলাদেশের খসড়া আইন (তৃতীয় চ্যাপ্টার-অধিকার সুরক্ষা- উত্তরাধিকার) অনুসারে-

“ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি কতৃক অনুসৃত ধর্ম অনুসারে তাহার জন্য সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিম্নবর্নিতভাবে নির্ধারণ হইবে। যথা-

ক) ট্রান্সজেন্ডার ম্যানের জন্য উত্তরাধিকারের অংশ পুরুষের অংশের অনুরূপ হইবে;

খ) ট্রান্সজেন্ডার উইম্যানের জন্য উত্তরাধিকারের অংশ নারীর অংশের অনুরূপ হইবে।”

অর্থাৎ প্রস্তাবিত আইনে কোন নারী নিজেকে পুরুষ দাবি করে পুরুষের সমান সম্পত্তি পেতে আইনত বাধা নেই। এটি সম্পূর্ণভাবে ইসলামী শরীয়াহর সাথে সাংঘর্ষিক। এমন আইন পাশ করা হলে সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়বে।

বাস্তবতা হল যারা নিজেদের ট্রান্সজেন্ডার দাবি করে বিপরীত লিঙ্গের অনুকরণ করছে, তাদের সত্যিকারের জন্মগত পরিচয় অনুযায়ী সম্পত্তির অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা কখনোই ছিল না। তারা অধিকার বঞ্চিত ছিল না, তাদের সব অধিকার ছিল। কিন্তু তারা বিপরীত লিঙ্গের অনুকরণ করে এই পুরো পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটিয়েছে।

জনপরিসরে অরাজকতা ও নারীর জন্য হুমকিঃ

শুধু উত্তরাধিকার বন্টন না ট্রান্সজেন্ডারবাদকে বৈধতা দেয়া হলে অরাজকতা দেখা দেবে জনপরিসরের প্রায় সব ক্ষেত্রে। প্রস্তাবিত আইন পাশ হলে প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষকে তার দাবি অনুযায়ী নারী বা পুরুষ হিসাবে মেনে নিতে হবে। ফলে নিজেকে নারী দাবি করা কিশোর বা পুরুষ মহিলা স্কুল, কলেজ বা হোস্টেলে ভর্তি হতে পারবে। সংরক্ষিত নারী কোটাতে আবেদন করতে পারবে নিজেকে নারী সাজা পুরুষ।

এগুলো কাল্পনিক কোন আশঙ্কা নয়, এমন ঘটনা ইতিমধ্যে ঘটতে শুরু করেছে। ১৭ই নভেম্বর ২০২৩ তারিখে দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত ‘‘প্রতিদিন প্রার্থনা করতাম, ঘুম থেকে জেগেই যেন নিজেকে মেয়ে হিসেবে দেখতে পাই’ শিরোনামের প্রতিবেদনে, একজন পুরুষের কথা বলা হয়েছে যিনি এখন সরকারী মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর পরিচালিত কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে সিট পেয়েছেন!

উক্ত প্রতিবেদনেই বলা হচ্ছে এই ব্যক্তির নতুন পরিচয় “… ঢাকার বাইরে থাকা পরিবারের অনেকেই জানেন না।” অর্থাৎ এই ব্যক্তি জন্মগতভাবে পুরুষ। কিন্তু সে যে এখন নারী সেজেছে।,নারীর পোশাক পরছে, এটা তার পরিবারও ঠিক মতো জানে না। অথচ তাকে মহিলা হোস্টেলে সিট দিয়ে দেয়া হয়েছে!

এতে করে ঐ সিট থেকে একজন নারী তো বঞ্চিত হলেনই, পাশাপাশি হোস্টেলের অন্য নারীদেরও হুমকির মুখে ফেলা হল। যে পশ্চিমা বিশ্ব থেকে এই ঘৃন্য মতবাদ আমদানী করা হচ্ছে, সেখানেই এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যেখানে নারী সাজা পুরুষের হাতে পাবলিক টয়লেট, হাসপাতাল এমনকি কারাগারেও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন নারীরা। যদি আইনের মাধ্যমে ট্র্যান্সজেন্ডারবাদকে প্রতিষ্ঠিত করা হয় তাহলে এমন ঘটনা বাংলাদেশেও ঘটবে। ট্র্যান্সজেন্ডারবাদকে বৈধতা দেওয়ার অর্থ নারীদের জন্য নির্ধারিত স্থানগুলোতে পুরুষের অনুপ্রবেশের পথ করে দেওয়া।

নারী সাজা পুরুষ কি নারীদের বাথরুম, নারীদের কমনরুম ব্যবহার করবে? কোন সুস্থ মানুষ কি চাইবেন তাঁর মা, বোন, স্ত্রী কিংবা কন্যা কোন নারী সাজা বিকৃত রুচির পুরুষের সাথে একই বাথরুম ব্যবহার করুক?

ধানমন্ডি বয়েজ কিংবা গভরমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের নবম শ্রেনীর শারীরিকভাবে সুস্থ কোনো ছাত্র যদি হঠাৎ নিজেকে মেয়ে দাবি করা শুরু করে এবং রাষ্ট্র যদি তাকে ভিকারুন্নিসা কিংবা অগ্রনী বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সুযোগ করে দেয়, তাহলে সেটা কী ধরণের বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে? ছোট বালিকা আর কিশোরীদের বাথরুমে কিংবা কমনরুমে কিশোরদের ঢুকতে দেওয়ার ফলাফল কী হবে? নারী সাজা পুরুষ কি নারীদের সাথে গিয়ে নামায পড়বে? পুরুষ সাজা নারী কি পুরুষের সাথে এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামায পড়বে?

এগুলো সামাজিকভাবে বিপর্যয় টেনে আনবে। আর ইসলামের দৃষ্টিকোন থেকে এ প্রতিটি কাজ হারাম এবং মহান আল্লাহর নির্ধারিত সীমার লঙ্ঘন। এ মতবাদ গ্রহণ করা, এমন আইন বানানোর ফলাফল হলো বিভিন্ন যৌন বিকৃতিকে স্বাভাবিক ও বৈধ বলে মেনে নেওয়া। নারী এবং পুরুষের মাঝের বিভেদ, সীমারেখা মুছে দেওয়া। বিকৃতির স্বীকৃতির অর্থ সেটার স্বাভাবিকীকরণ এবং প্রসার। এই আইন পাশের চূড়ান্ত ফলাফল হবে পরিবার ও সমাজের ভাঙ্গন। এমন দ্বীন ও দুনিয়া বিধ্বংশী মতবাদ এদেশের মুসলিমরা কখনো মেনে নিবে না। এ রকম জঘন্য মতবাদ প্রচার-প্রসারের চেষ্টা যে-ই করুক এদেশের ইসলাম-প্রিয় জনতা তা রুখে দেবে ইনশাআল্লাহ।

***

যৌনবিকৃতি স্বাভাবিকীকরণের ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ তথা এলজিবিটি এজেন্ডা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক, সমাজবিধ্বংসী, জনবিরোধী। আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশে ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের স্বাভাবিকীকরণের অপচেষ্টা চলছে। এসব তৎপরতার এর পেছনে আছে সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা বিশ্বের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। ঋণের ফাঁদ আর কূটনৈতিক চাপের মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের বিকৃতিগুলো আমাদের সমাজে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে তারা ব্যবহার করছে মিডিয়া, এনজিও আর কিছু কুচক্রী মহলকে।

মহান আল্লাহ কুরআনে বলেছেন,

আর তোমরা এমন ফিতনা থেকে বেঁচে থাক যার শাস্তি শুধু তাদের উপর পতিত হবে না যারা তোমাদের মধ্যে জালেম এবং জেনে রেখ যে, আল্লাহর আযাব অত্যন্ত কঠোর। (তরজমা, সুরা আনফাল -২৫)

এ ভূখণ্ডে বিকৃতি ও সীমালঙ্ঘনের এ মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হলে এর জন্য দুনিয়া এবং আখিরাতে দায়ী থাকবো আমরা সবাই। তাই এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে সবার।

বিশেষ করে ধর্মপ্রাণ মুসলিম সমাজ এধরনের যেকোন প্রচেষ্টার বিরোধিতা করতে মহান আল্লাহর কাছে দায়বদ্ব। এধরনের বিকৃতির বিরোধিতা করা ঈমানের দাবি। যে কোন মুল্যে এ ঘৃণিত মতবাদকে রুখে দিতে হবে।

এটি কোন রাজনৈতিক বিষয় নয়। এটি ঈমানের প্রশ্ন, সমাজের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষার করার প্রশ্ন। এর স্থান দলীয় রাজনীতি, নির্বাচনী রাজনীতি ইত্যাদির উর্ধে। দলমত নির্বিশেষে সবাই ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ তথা এলজিবিটি এজেন্ডার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

এর জন্য এলাকায়-এলাকায় মসজিদের মিম্বর থেকে এ বিষাক্ত মতবাদের ব্যাপারে সাধারণ জনগণ সচেতন ও সতর্ক করা সকল উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব। পাশাপাশি এদেশের শিক্ষিত যুব সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে। প্রতিটি এলাকার মুসলিমদের বিশেষত যুব-সমাজ এ ক্ষেত্রে উলামায়ে-কেরামকে সর্বাত্বক সহযোগিতা করতে হবে। নিজ নিজ ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসতে হবে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি, পেশাজীবি, শিল্পপতি এবং বিবেকমান সাংবাদিকদেরও। সকল ইসলামী ঘরানাকে একত্রে, ঐক্যবদ্ধভাবে এ ফিৎনার মোকাবেলা করতে হবে।  

ইসলামী শিক্ষা, সামাজিক মূল্যবোধ ও জনতার স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে পশ্চিমাদের হুকুমে এমন আইন বাস্তবায়ন করা হলে সেটিকে বাংলাদেশের মুসলিম সমাজ ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, সমাজবিধ্বংসী ও জনবিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে দেখবে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এ ফিতনা নির্মুলে তাউফিক দান করুন, আমীন।

অন্যান্য লেখা

আল্লাহর কসম! উহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনা দান করলেও তুমি আমার সেই প্রবীণ সাহাবীদের সমকক্ষ হতে পারবে না,"— রাসূলুল্লাহ ﷺ এই মহামূল্যবান বাক্যটি বলেছিলেন যখন খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) ও......
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, "কেউ যদি জীবিত অবস্থায় একজন শ হি দ কে দেখতে চায়, তবে সে যেন তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহকে দেখে।" এই দীপ্তিময় বক্তব্যের কারণেই তিনি ‘জীবন্ত শ হি দ’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। উহুদের.....
প্রত্যেক নবীরই একজন বিশেষ অনুসারী থাকে, আর আমার অনুসারী হলো যুবাইর।” — রাসূল ﷺ-এর এই বিশেষ স্বীকৃতিই যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.)-এর স্থান ও মর্যাদার পরিচয় তুলে ধরে। তিনি ছিলেন রাসূল ﷺ-এর...........

আপনার অনুদানটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে!

আপনার সদয় অনুদানের জন্য ধন্যবাদ! আপনার উপহারটি সফলভাবে পৌছে গেছে এবং আপনি শীঘ্রই একটি এসএমএস অথবা ইমেইল পাবেন।

অনুদানের তথ্য

Thank You for Registering! 🎉

Connect Us:

See you soon! 🎉