উসমান গনি (রা.)

“প্রত্যেক নবীরই বন্ধু থাকে, জান্নাতে আমার বন্ধু হবে ‘উসমান’।” রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর উক্তিটির মাধ্যমেই অনুমান করা যায় উসমান (রা.) প্রিয় নবীজি ﷺ-এর কত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। খাদিজা (রা.) এর আদরের দুই কন্যা রুকাইয়া এবং তাঁর মৃ ত্যু র পর উম্মু কুলসুমকে উসমান (রা.) এর সাথে বিবাহ দেন। পরপর দুইবার এমন মহান সৌভাগ্য প্রাপ্তির কারণে তিনি “যুন্নুরাইন” (দুই নূরের অধিকারী) উপাধি লাভ করেন। উম্মু কুলসুমের মৃ ত্যু র পর রাসূল ﷺ বলেন, “আমার যদি তৃতীয় কোন মেয়ে থাকতো তাকেও আমি উসমানের সাথে বিয়ে দিতাম।” সুবহানাল্লাহ! কতই না উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন তিনি! রাসূলুল্লাহ ﷺ আমৃত্যু তার উপর সন্তুষ্ট ছিলেন এবং বারবার তার জন্য ঘোষণা এসেছে নিশ্চিত জান্নাতের।
উসমান (রা) হলেন “আস-সাবেকুনাল আওয়ালুন” (প্রথম পর্বে ইসলাম গ্রহণকারী); আবু বকর (রা.) এর দাওয়াত ও তাবলীগের ফলে তিনি ইসলামের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হন এবং বিনা দ্বিধায় রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর আনিত বিধানের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। উসমান (রা.) বলেন, “আমি ইসলাম গ্রহণকারী চার জনের মধ্যে চতুর্থ”। আলি (রা.), যায়েদ বিন হারিসা (রা.) ও আবু বকর (রা.)-এর ইসলাম গ্রহণের পরপরই তিনি মক্কার তৎকালীন বৈরি পরিবেশে একাগ্রচিত্তে তাওহীদের সুমহান ছায়াতলে আশ্রয় নেন।
শুধু ইসলাম গ্রহণ করার কারণেই কুরাইশদের একজন সম্মানিত ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে ইসলামের শত্রুদের চরম লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। আপন চাচা রশি দিয়ে বেঁধে অ মা নুষিক প্র হা র করতেন। বলতো, “একটা নতুন ধর্ম গ্রহণ করে তুমি আমাদের বাপ-দাদার মুখে কালি দিয়েছ। এ ধর্ম ত্যাগ না করা পর্যন্ত তোমাকে ছাড়া হবে না।” এতে উসমান (রা.)-এর ইমান একটুও টলেনি। তিনি বলতেন, “তোমাদের যা ইচ্ছে করো, এ দ্বীন আমি কক্ষনো ছাড়তে পারবো না।” তীব্র অ ত্যা চা রে র মুখেও ইসলামের প্রতি এমন দৃঢ় অবিচলতা ভাবিয়ে তোলে আমাদের। প্রেরণা যোগায় চরম প্রতিকূল পরিবেশেও দৃপ্তকণ্ঠে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দেওয়ার।
উসমান গনি (রা.) যৌবনে অন্যান্য অভিজাত কুরাইশদের মতো ব্যবসা শুরু করেন। সীমাহীন সততা ও বিশ্বস্ততার গুনে ব্যবসায় লাভ করেন অসাধারণ সাফল্য। মক্কার সমাজে একজন বিশিষ্ট ধনী ব্যবসায়ী হিসেবে “গনি” উপাধি লাভ করেন। ধন-সম্পদের অফুরন্ত ভান্ডারের অধিকারী হয়েও তিনি ছিলেন দুনিয়াবিমুখ। আজীবন জান-মাল ও সহায় সম্পত্তি ইসলাম ও মুসলিমদের কল্যাণে বিলিয়ে দিয়েছেন বেহিসাবে। তাবুক যু দ্ধে র এক তৃতীয়াংশ সৈন্যের যাবতীয় ব্যয়ভার উসমান (রা.) নিজ কাঁধে তুলে নেন। সাড়ে নয়শ’ উট ও পঞ্চাশটি ঘোড়া সরবরাহ করেন। অন্যান্য যু দ্ধে র প্রস্তুতির সময়ও তিনি প্রাণ খুলে চাঁদা দিতেন। বিপুল অর্থের বিনিময়ে ই য়া হু দী মালিকানাধীন ‘বীরে রুমা’ কুপটি কিনে মদিনার মুসলিমদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। ইসলামের সংকটকালে আল্লাহর রাস্তায় তিনি যেভাবে খরচ করেছেন; অন্য কোন ধনাঢ্য মুসলিমের মধ্যে এমন নজির আজও খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য।
লজ্জা ও প্রখর আত্মমর্যাদাবোধ ছিল তার মহান চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। জাহেলী যুগের কোন অপকর্ম তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। রাসূল ﷺ বলেন, “আমার উম্মতের মধ্যে উসমান সর্বাধিক লজ্জাশীল।” উসমান (রা.)-এর প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, সৌজন্য, বিনয় ও মৌলিক মানবিক গুণাবলীর কারণে তিনি মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসা পেয়েছেন। মানুষের অধিকার আদায়ে সচেতন থাকার পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালার সাথে সম্পর্ক স্থাপনেও ছিলেন একান্ত অনুগত।
ফরজ-ওয়াজিবের পাশাপাশি সুন্নাহ ও নফল ইবাদতেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেন। প্রতিবছর হজ আদায় করতেন। বছরের অধিকাংশ সময় রোযা রাখতেন। রাতে একান্ত ব্যক্তিগত সময় কাটতো আল্লাহ তায়ালার সাথে কথোপকথনে। তবে কারো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতেন না। রাতে চাকরদের খিদমাত গ্রহণ করতেন না। বান্দাহ ও আল্লাহর অধিকারের প্রতি এমন আন্তরিক ভারসাম্য স্থাপন কি নিদারুণভাবেই গড়ে তুলেছিলেন তিনি! আমরাও কি পারি না আল্লাহ ও বান্দার অধিকারের প্রতি সচেতন হতে? এক ভারসাম্যময় জীবন গঠনের সময় কি এখনো আসেনি?
উমার (রা.)-এর মৃ ত্যু র পর বিশিষ্ট সাহাবীদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তক্রমে উসমান (রা.)-কে ইসলামের তৃতীয় খলিফা ঘোষণা করা হয়। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সময়ে তিনি ছিলেন ওহি লেখক। তাঁর খিলাফতের সময়কালে অনারব অঞ্চলেও ব্যাপকভাবে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন ভাষারীতি ও পঠন পদ্ধতিতে ভিন্নতা থাকায় কুরআন নিয়ে মুসলিমদের মাঝে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। তিনি অত্যন্ত প্রজ্ঞার সাথে সাহাবীদের পরামর্শক্রমে এক অভিন্ন কপি তৈরি করেন ও নিপুনভাবে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করেন। এজন্য তাঁকে “জামিউল কুরআন” বা কুরআন সংকলক উপাধি দেওয়া হয়।
উসমান (রা.)-এর জীবনী থেকে আমরা শিক্ষা পাই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ইসলামের উপর অবিচল থাকার; অনুকূল পরিস্থিতিতেও যেন আল্লাহ তায়ালা ও বান্দার অধিকার বিষয়ে সচেতন থাকি; এ বিষয়েও তাঁর জীবনী আমাদের সামনে এক অনন্য উপমা উপস্থাপন করে। উসমান (রা.) উত্তম আখলাক, কোমলতা ও লজ্জাশীলতা আমাদের উন্নত চরিত্র বিকাশের পথ তৈরি করে দেয়। সেই পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমরা স্বপ্ন দেখি ফিরদাউসের বাগানে পৌঁছানোর। স্বপ্ন দেখি, সকল বিশ্বাসী ও সত্যবাদীদের সাথে জান্নাতের এক ঐতিহাসিক সম্মেলনে মিলিত হওয়ার…

লেখক: ভার্সিটিয়ান দ্বীনি পরিবার

অন্যান্য লেখা

ইবনে নাদীম, বিস্ময়কর আল ফিহরিস্ত বইয়ের লেখক, যার পুরো নাম আবুল ফারাজ মোহাম্মদ বিন ইসহাক আন নাদীম, তিনি ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ ওয়াররাক। আমাদের পরিচিত আরো অনেকেইওয়াররাক.........
( আব্বাসা। খলীফা হারুনুর রশিদের বোন। তাকে নিয়ে গল্পের শেষ নেই। বলা হয় তার সাথে উযির জাফর বারমাকির প্রনয় ছিল। জাফরের সাথে তার বিয়ে হয়েছে। শর্ত ছিল তারা যৌন সম্পর্ক করতে.......
ভারতবর্ষে বরাবরই ইতিহাসচর্চায় আগ্রহ- উদ্দীপনা ছিল। এখানকার লেখকরা তাই রাজন্যবর্গের শাসনকাল ও তাদের যুদ্ধ-বিগ্রহের ইতিহাস সংরক্ষনে কলম ধরেছেন। তারা আলেম, সুফী, কবি,......

আপনার অনুদানটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে!

আপনার সদয় অনুদানের জন্য ধন্যবাদ! আপনার উপহারটি সফলভাবে পৌছে গেছে এবং আপনি শীঘ্রই একটি এসএমএস অথবা ইমেইল পাবেন।

অনুদানের তথ্য

Thank You for Registering! 🎉

Connect Us:

See you soon! 🎉